Wednesday, March 16, 2016

বাবা

আমাদের শর্মির বাবা চিটাগাং স্টিল মিলের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান হিসাব কর্মকর্তা আজিজুল হক চাচা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ইন্নালিল্লাহে......রাজিউন। 

দুপুর থেকেই খবর টা পাওয়ার পর থেকে শর্মি কে খুব মনে পরছে। কিভাবে নিজেকে সামলাচ্ছে? এই রকম মুহুর্তে কি হয় আমি অনুভব করতে পারি।আমিও যে শর্মির মতোই বাবা হারা্নোর যন্ত্রনা নিয়ে বেচে আছি।আমি এখনো নিজেকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভালো থাকার জন্য সব ইমোশন আমি ফেলে দিয়েছি। সব ভুলেও কি ভুলতে পেরেছি ? কি জানি হয়তো শর্মি নিজেকে বুঝাবে,নিজেকে স্বাভাবিক রাখবে ,আমি প্রার্থনা করি শর্মির জন্য ,তার পুরা ফ্যামেলির জন্য চাচার জন্য। আল্লাহ ওদের সবাই কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরার তৌফিক দিক। 

শর্মির মতোই আমার জীবনের ভয়ঙ্কর কঠিন দিন ছিল ৩ মে ,২০০৯ । সেই দিন ঘুম ভাংলো একদম সকাল ছয়টায়,একটা ফোন আসলো, শাহ আলমের কল দেখে লাফ দিয়ে উঠি। ও ভাইয়ার ফ্রেন্ড ।শাহ আলম কি বলে যাচ্ছে মাথায় ঢুকছে না। আমার মাথায় তখন বেলভিউ হসপিটালের বেডে থাকা আমার বাবার কথা ঘুরপাক খাচ্ছে ।


বারবার জিজ্ঞেস করে যাচ্ছি বাবা কেমন আছে? কথা এড়িয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে । শুধু বলল আঙ্কেল এর শরীর ভালো না , দোয়া করতে থাকো ,
হার্টের ছিদ্র ছিল ওইটা অপারেশনের কথা ছিল, অপারেশন কি হয়ে গেছে ?
নমি আঙ্কেলের সেন্স নাই ,আঙ্কেলের সেন্স নাই, সেন্স নাই , শুনতে পাচ্ছো ? সেন্স ..................
কথাটা বারবার বলে যাচ্ছে ,একটু পর কি হতে যাচ্ছে, আমি একটা বড় সময় বাবার জন্য হসপিটালের ডাক্তার দের সাথে সময় কাটিয়েছি, যা বুঝার আমি তখনি বুঝে যাই, কিন্তু মানতে পারছিলাম না । 
একটু পর ভাইয়ার কাছেও ফোন আসে, কিকথা হয় জানিনা শুধু দেখতে পাচ্ছি বড় ভাইয়া কাপছে ,আমাকে বলে কারো বাবা চিরদিন বেচে থাকে না।আমি আছি তোদের পাশে .........
আমাদের আত্বীয় স্বজন সবাই আসতে থাকে আমাদের বাড়ীতে। আমাকে মানষিক ভাবে প্রস্তুত করতে থাকে
আজো আমি প্রস্তুত হচ্ছি , হয়ে যাচ্ছি ......
আমার বারবার মনে হচ্ছে এই রকম পরিস্থিতিতে কতবার আমি পরেছি,কত রাত একা সামাল দিয়েছি , চট্টগ্রামের হলিক্রিসেন্ট হসপিটালে কত কঠিন মুহুর্ত আমি ফেস করেছি একদম একা ।ডাক্তার কখনো ২৪ ঘন্টা কখনো ৪৮ ঘন্টা বেধে দিয়েছে, বাবা ঠিক ফিরে এসেছেন , এইবারো আসবেন । সবাই শুধু শুধু পরিবেশ ভারি করে যাচ্ছে ।
ঠিক ফিরে আসবেন ।

আমার অনেক কথা জমা হয়ে আছে , অনেক গল্প বলার আছে ,আছে অনেক অনেক ... ...
৪ দিন পর সত্যি ফিরে এসেছেন আমাদের কাছে, ফিরে এসেছেন কফিনে বন্দি হয়ে । সেই কফিনেই বন্দি হয়ে যায় আমার সব আনন্দ, মাটিতে চাপা পরে যায় আমার সব জমানো গল্প। সেদিনই আমার সব স্বপ্ন গুলো কে শ্বাষরোধ করে হত্যা করি।যখনই বাবার কথা মনে হয় বাড়ির ছাদে উঠে এক কোনায় বসে থাকি,হয়তো মনের অজান্তেই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি,আকাশে কি যেন আছে সবার দৃষ্টি সেখানেই এসে হারিয়ে যায়,এইখানেই হারিয়ে যেতে দেই আমাদের কষ্ট গুলো।মহাশুন্যের মাঝে কষ্ট গুলো ছুড়ে দিয়েই হয়তো বেচে থাকার চেষ্টা করি।কিজানি হয়তো সব বাবা হারানো ছেলেমেয়েরা এইভাবেই সব কিছু থেকে আড়াল করার চেষ্টা করে যায়।নিজেকে নিজের কাছ থেকে আড়াল করে যায় !! আমি আজো করে যাচ্ছি । 

(শর্মি যত তাড়াতাড়ি পারিস এই সময় টুকু ভুলে কাজের ভিতর ডুবে যাওয়ার চেষ্টা কর। আমরা ৯৭ সব সময় আছি তোর জন্য, ৯৭ ব্যাচে আত্মার সম্পর্ক আছে। আমরা কখনো ভাই কখনো বা বন্ধু। সবাই কে নিয়েই আমরা পরিপুর্ন। )



- Iftee Nomi

No comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.



Contact Form

Name

Email *

Message *