Monday, March 21, 2016

সময়

অফিসে আমার আর সাইফ ভাই এর টেবিল ঠিক মুখোমুখি । দুই জন কে সারাক্ষন পিসি তে কাজ করতে হয়, সভাবতই মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় । আমাদের আই কন্টাক্ট টা এই জন্য একটু বেশি হয়। আমাদের বস প্রায় বলে এই দুইটা সারাক্ষন দুই জনের দিকে তাকায় থাকে J  এদের একটা মেয়ে হইলে এত দিনে নির্ঘাত বিয়ে করে ফেলতো। যাই হোক আমাদের কাজের জন্য দুই জন কে অনেক বার কনফারেন্স রুমে মিটিং করতে হয় , মিটিং আর কি করি কাজ করতে ইচ্ছে না করলে অনেক গুলো ফাইল নিয়ে বসে আড্ডা দেই। আজ সাইফ ভাই ইশারা দিয়ে কনফারেন্স রুমে যেতে বল্লো ।দুই জন গিয়ে বসে শুরু করলাম আড্ডা। কেউ আসলে ফাইল ঘাটাঘাটি করা শুরু করি।

বাতাসে একটা খবর ভেসে আসলো , একজন কলিগের বউ ভেগে গেছে. তারা পালিয়ে বিয়ে করেছিল এখন বউ তার কাছ থেকে পালিয়েছে , এইটা কিছু হইলো
আমি বুঝলাম না এত প্রেম তাদের ভিতর, বাবা মা সব কিছু ছেড়ে যার হাত ধরে বেড়িয়ে পরেছিল তাকে ছেড়ে যেতে একটুও বুক কেপে উঠলো না
নমি তুমি ওরে চিনো না , ব্যাটা ব্যক্কল। আরে তুই পালিয়ে বিয়ে করছিস ভালো কথা, শ্বশুর বাড়িতে প্রথমবার লাত্থি খাবি , ক্ষেত্র বিশেষে বন্দুকের দৌড়ানিও খাবি, পরেরবার খাবি ধমক তারপর ধিরে ধিরে মেনে নিবে , সে বিয়ে করেছে দুই বছরের মতো এখনো শ্বশুর বাড়িতে যোগাযোগ করে নাই। বউ আর কত দিন তোর এই রকম আচরন মেনে নিবো ?
থাক কারো পার্সোনাল ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না
আরে এই খানে কেউ নাই এই জন্যই তো বলছি
বাদ দেন ।

পিয়ন এসে আমাদের দুই জন কে এম ডি স্যার এর রুমে যেতে বলল।
কি করছো ?
মিটিং করছি
কি নিয়ে ?
একাউন্টস রিকন্সিলিয়েশন ।
যাও
একাউন্টস রিকনসিলিয়েশনের কথা বললে স্যার আর টু শব্দ করে না ।
আবার শুরু করলাম
গান গাইতে পারো ?
না রে ভাই , আমার ভিতর কোন প্রতিভা নাই । গান বাজনা আমার হয়না।



তুমি যে আছো তাই আমি পথে হেটে যাই
হেটে হেটে বহু দূর
বহু দূর যেতে চাই
রোদ ঊঠে গেছে তোমাদের নগরিতে
আলো এসে থেমে গেছে তোমাদের রাস্তায়
আনন্দ হাসি মুখ চেনা চেনা ...
এর মাঝে আমাদের ছুটে যাওয়া দরকার ......
কি অসাধারন লিরিক ।
হম ।
ঐ মিয়া তুমি লিরিক লিখতে পারো না
হা হা হা ।আমি লিখবো লিরিক
কেন কি হইছে ?
আমি লিরিক লিখলে তেলাপোকা খাবে ।



জিন্দেগি সাজায়ে ম্যারে তেরে লিয়ে ...
সাইফ ভাই। এই গান গাইলে আমি এখন আর মিটিং করতে পারবো না। হিন্দিতে আমার এলার্জ়ি আছে ।
আচ্ছা আচ্ছা বন্ধ করলাম



সকাতরে ঐ কাদিছে সকলে শোন শোন পিতা
কহ কানে কানে শোনাও প্রানে প্রানে
মঙ্গল বারতা
গান্ টার লিরিক মনে নাই । তোমার মনে থাকলে ধরিয়ে দাও
আমার প্রতিভা নাই রে ভাই
তুমি গুন গুন করে কি গান যেনো গাও



তুমি আছো বলে...মৌন কথোপকথন
তুমি আছো বলে...পৃথিবীটা লাগে আপন
তুমি আছো বলে পাশে, হিমেল স্নিগ্ধতা হাওয়ায়
তুমি আছো বলে পাশে, সবি ভাল লাগে অবেলায়



তুমি আছো বলে...
জোনাকির গানে গানে চোখ মেলে চাঁদ উঠেছে
তুমি আছো বলে...
চুপি চুপি আজ সব বাগানে ফুল ফুল ফুটেছে।।



হম । আচ্ছা তোমার নোটিশ বোর্ডের লাবন্য এখন কোথায় ?
এইটার সিকুয়্যাল এখন বিনি (জুনিয়র ফ্রেন্ড) শুরু করেছে ,সে বলতে পারবে ।
মানে কি?
নোটিশ বোর্ডের ৫ টা খন্ড আছে। আমার আর কাইয়ুম এর পার্ট শেষ , কাইয়ুম এর পার্টে লাবন্য তেমন ভাবে আসে নাই , দেখি বিনি কিভাবে আনবে।এই পার্টটা পুরোটাই লাবন্য কেন্দ্রিক হবে।
আচ্ছা বিনির পার্ট টা আমাকে দিও। লাবন্যর প্রতি আমার আগ্রহ আছে ।
তোমার কাছে ছবি আছে ।
মানিব্যাগে নেই কিন্তু কাছাকাছি ছবি দেখাতে পারবো ।
তাড়াতাড়ি দাও
নেট থেকে একটা ছবি নামিয়ে তাকে দিলাম
এইটা কে ? লাবন্য নাকি
না , লাবন্যর সাথে মিল আছে
কে?
ঐন্দ্রিলার অনেক আগের ছবি ।
আগুন আগুন
কই
আরে ছবির ভিতর
হা হা হা ।
তুমি বিয়ে করলে না কেন?
সাইফ ভাই । লাবন্য হচ্ছে অমিতের গার্ল ফ্রেন্ড। আমি কেন অন্যের গার্ল ফ্রেন্ড কে বিয়ে করবো ।
ওও বুঝলাম।
সত্যি কি লাবন্য বলে কেউ নেই?
থাকবে না কেন
কই ?
আমার সব গল্পের চরিত্র গুলো কোথাও না কোথাও আছে।আমি আপনাকে ভেবেও গল্প লিখি।আমি যাদের সাথে কথা বলি তাদের কথা বলার স্ট্যাইল ফলো করি। আই কন্টাক্ট বুঝার চেষ্টা করি।কোন জটিল পরিস্থিতি তে পরলে আপনি কেমন আচরন করেন তা খেয়াল করি তার পর আপনাকে আমার গল্পের চরিত্রে ঢেলে দেই ।
দেইখো মিয়া চরিত্রহীন বানিয়ে দিও না , এত যে লিখো রেজাল্ট কি ?
অশ্বডিম্ব
হা হা হা। কেন?
লিখার মান ভালো না ।
কখন বুঝলে ?
আমার দুইটা ছোট ভাই আছে।এদের লিখা দেখার পর বুঝতে পারি আমি কতটা পিছিয়ে আছি
নাম কি?
আয়ান & আবিদ
এরা নোটিশ বোর্ড লিখবে ?
অবশ্যই
কিছু মনে নিও না তোমার লিখা আমার ও ভালো লাগে না
হা হা হা , সাইফ ভাই আমারো ভালো লাগে না । কাউরে আবার বইলেন না তাহলে ইনেজ সংঙ্কটে পরবো
আচ্ছা ।
তোমাকে ভাইগা বিয়ে করার কথা বলছিলাম।
হম
আমার এক বোন ও ভাইগা বিয়ে করেছিল
তারপর ?
ভাইগা বিয়ে করার পর যা হয় মান সম্মান বর্গা দিয়ে দিতে হয়
হা হা হা
এর পা ধরে তো তার হাত ধরে, কি যে বেহাল অবস্থা
আব্বা দিসে ঘর থেকে বেড় কইরা
মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেছে ,তুই আমার বোন !!! তুই পলাইছোস? আমাদের মান ইজ্জত এর কথা ভাবলি না ?
তারপর
কয়দিন পর আবার এসে পুরান প্যাচাল
আব্বা তো পারলে গুলি কইরা দেয়।আপু ঘর থেকে বেড় হবার সময় আমি কলেজ থেকে বাসায় ঢুকছিলাম।
তারপর
আপুর চোখ ছল ছল করছে।আমার পা ধরে বলে উঠলো আমাকে মাফ করে দিস। মনে হলো এর পর আপু আর কখনো আসবে না।এই আপু কত বার যে স্কুলে রেজাল্ট খারাপ করার পর আব্বার হাত থেকে আমাকে বাচিয়েছে , হোম ওয়ার্ক করে দিয়েছে, স্কুলে উঠে প্রথম একটা মেয়ের প্রেমে পরেছিলাম সেই কথা এক কান দুই কান হয়ে আব্বার কানে এসে পরে , আব্বার হাতে বেদম মাইর খেতে বসেছিলাম , আপু তখন আমাকে বাচিয়েছিল। ... ... ...
আমার পুরো শরীর কেপে উঠলো । আমি তাকে আর দুলাভাই কে আমার ঘরে নিয়ে আসলাম ।
বললাম এই ঘরে তোমরা থাকো । আমি ড্রইং রুমে বসে টিভি দেখতে গেলাম
আব্বা আমাকে ঢেকে বল্ল কিরে তুই ... গুলিরে আবার ঘরে ডেকে আনলি কেন
কতক্ষপ্ন ইচ্ছে মতো বক্লো আমারে
আবার আব্বা তাকে আমার রুম থেকে বেড় করার জন্য রেডি হচ্ছে
আমার মাথায় আগুন ধরে উঠলো
আমি হুঙ্কার দিয়ে উঠে বললামআমি আমার আপু রে আজ এই ঘরে জায়গা দিয়েছি , দেখিও কার সাধ্য আছে আপু কে বেড় করে
আপু থাকতে না পারলে এই ঘরে আমিও থাকবো না। কাউরে থাকতেও দিমু না
আমি তখনো এই রকম আচরন করার মতো ছেলে ছিলাম না। কিন্তু আমার অবস্থা এত এগ্রেসিভ ছিল যে আব্বা ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
কিছুক্ষন বক বক করে আব্বা নামাজে চলে যায়
পরে ধীরে ধীরে সব নরমাল হয়ে যায়
ঐ ব্যাটা এই রকম ভাবে শ্বশুড় বাড়ি কে ম্যানেজ করতে পারেনাই বলে এই দশা
হম
নমি জানো আমার সেই আপুর এখন কোথায় ?
কোথায় ?
আমাদের বাসায় ।
তার ক্যান্সার।সব কেমো দেয়া শেষ । এখন ভাইরাস যেনো বাড়তে না পারে সেই ট্রিটমেন্ট চলছে
তার দুই ছেলে একটা এইটে অন্যটা ফোর এ পড়ে ।
আপু আজ অফিসে আসার সময় আমার হাত ধরে বলে সাইফ আমার বাচ্চা গুলো কে তুই দেখবি ।
আমি তো যেকোন সময় ......
যে কোন সময় ...
সময় ...
...
( কিছু গল্প ভয়ংকর সত্যি , কিছু গল্প শেষ করা যায় না , সীমিত ক্ষমতাতে আমি আটকে গিয়েছি । এই গল্পের পরিনতি লিখার ক্ষমতা আমার নেই , সময় মানুষ কে অনেক দূরে নিয়ে যায় , সময় আমাদের আনন্দ দেয় আবার কাদায় আবার নিস্তব্ধ করেও দেয় , সময়ের কাছেই আমরা বার বার আত্বসমর্পন করি ) 


- Iftee Nomi

No comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.



Contact Form

Name

Email *

Message *