বেশ কিছুদিন আগের কথা। মীনাবাজার থেকে কিছু কেনাকাটা করলাম। নিয়মিত সাপ্তাহিক বাজার। বিস্কুট কিনলাম হক-এর চকলেট ডাইজেস্টিভ, ম্যাকভিটিস-এর চকলেট ডাইজেস্টিভ এর কফি ( ওরিও র দেশি ভাই যেমন ডোরিও... তবে খেতে অবশ্য ডোরিওর মত অখাদ্য না ) । যাই হোক বাসায় এসে মনের সুখে বিস্কুট খাচ্ছি। খেতে খেতে হঠাৎ মনে হল অন্যরকম কিছু চাবাচ্ছি। তাকিয়ে দেখি কি আশ্চর্য! বিস্কুটের ভেতর থেকে এক গুচ্ছ পাটের আঁশের মত জিনিস উকি দিচ্ছে! দেখে মনে হয় দড়ি।
সাথে সাথে নিয়ে গেলাম মীনাবাজার। ওরা আমতা আমতা করে বলল, সরি সার, এটা বদলে নতুন আরেক প্যাকেট নিয়ে যান? আমি বললাম, অবশ্যই না। নতুন বিস্কুট নিলে দড়ি রহস্যের সমাধান হবে কি করে? বাসায় এসে ফোন দিলাম হক বিস্কুট কোম্পানিতে।
: হক বিস্কুট ?
: জ্বী
: ভাই, আপনাদের বিস্কুটে দড়ি পাওয়া গেছে
: ও
: এখন কি করা যায়?
: দেখি কি করা যায়।
করার মধ্যে তিনি যা করলেন, ফোনটা কেটে দিলেন। আমার মাথায় আগুন ধরে গেল! এই দেশের অবস্থা? কি করা যায় চিন্তা করতে করতে মনে পড়ল, কিছুদিন আগে নিউজ পেপারে পড়েছিলাম যে সরকার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ নামে একটা অধিদপ্তর চালু করেছে। নেট থেকে ঠিকানা নিয়ে হাজির হলাম সেখানে।
প্রথমে যে রুমে ঢুকলাম, দেখি ভদ্রলোক ঘুমাচ্ছেন। কাশি দিয়ে, “এই যে ভাই” বলেও ঘুম ভাঙ্গাতে পারলাম না। পরের রুমে গেলাম। উনি সজাগ ছিলেনএবং বেশ মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনলেন। আমার থেকে সেই বিস্কুট, মানি রিসিট এসব রাখলেন। ওনার কথা মত একটা লিখিত অভিযোগও দিলাম। আমাকে আশ্বাস দিলেন যে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন। আমিও আশ্বস্ত হয়ে চলে আসলাম। ব্যবস্থা নেক না নেক অন্তত, দুঃখের কথা বলার একটা জায়গা তো পাওয়া গেল!
এর পর অনেকদিন হয়ে গেছে। ব্যাপারটা ভুলেই গিয়েছিলাম। একদিন দেখি মোবাইলে এক অদ্ভুত নাম্বার থেকে ৫/৬টা মিসড কল। মোবাইল অন্য রুমে ছিল। একটু সন্দিহান হয়ে কল ব্যাক করলাম। যিনি ধরলেন মনে হল খুবই উত্তেজিত।
: আমি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে বলছি, আপনি অরুণ সাহা? বিস্কুট নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন? আপনি এখনই আমাদের অফিসে চলে আসেন!
বুঝলাম, ঘটনা সিরিয়াস। বিস্কুট কোম্পানি মানহানির মামলা করে দিলো নাকি? এই বিচিত্র দেশে কিছুই অসম্ভব না। আমি কল্পনায় নানান দৃশ্য দেখা শুরু করলাম। আমি জেল হাজতে বসে আছি। বন্ধু বান্ধব সবাই আমার সাথে দেখা করতে আসছে- হাতে ডাইজেস্টিভ বিস্কুট।
যাই হোক হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে উপস্থিত হলাম সেই অফিসে। ঢুকে পরিচয় দিতেই আমাকে সরাসরি বসিয়ে দেয়া হল মহাপরিচালকের রুমে । ঘটনা যা শুনলাম তাতে আমি বিস্মিত। আমার অভিযোগের ভিত্তিতে ওরা বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালিয়েছে এবং ভেতরে নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ চালানোর জন্য পঁচিশ হাজার টাকা জরিমানাও আদায় করেছে! ঘটনা এখানেই শেষ না, পুরস্কার স্বরূপ সেই টাকার অর্ধেক এখন আমার হাতে তুলে দেয়া হবে! এরপর একটা ছোটখাটো সংবাদ সম্মেলন করা হলো, আমার হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হল, সাক্ষাৎকার নেয়া হলো, ছবি তোলা হল। ঘটনাটা পত্রিকাতেও এসেছিল। জানলাম সেই বছর আমিই নাকি একমাত্র ব্যক্তি যিনি কোন অভিযোগ করেছেন! কি অদ্ভুত!
চলে আসার সময় মহাপরিচালক সাহেব দুঃখ করে বললেন, আপনারা যদি কেউ না আসেন আমরা করবোটা কি?।
সমস্যাটা হল, আমরা আমাদের মাতৃভূমির প্রতি যতটা সংবেদনশীল, নিজেদের ব্যপারে ততটাই উদাসীন। আর এই উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে কিছু দুষ্ট লোক নির্বিচারে যা খুশি তাই করার সাহস পায়। আপনারা সবাই যদি একটু সচেতন হন, তাহলে এই দুষ্ট লোকগুলো কখনই এমন মাথাচাড়া দিতে পারবে না। এদেরকে ‘লাইনে রাখার’ ক্ষমতা আপনার হাতে, দায়িত্বও আপনার হাতে।
After all, “The world will not be destroyed by those who do evil, but by those who watch them without doing anything”
― Albert Einstein
সবাইকে আজ বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবসের শুভেচ্ছা।
Courtesy: Arun Shaha
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.