লেখকঃ পাভেল
হঠাৎ করে নই, অনেক সময় ভেবেছি। কিন্তু এখনকার ভাবনার গভীরতা
অনেকটাই বেশি। তখন আমি 3rd
year এ পড়ি, একে একে ৩ ভাই-বোনের খুব জ্বর । কোনো ভাবেই ভালো হয় না। বেশ কিছু Test এর পরে জানা গেল প্যারা-টাইফয়েড ৩ জনেরই। ৩ জনরই
সুস্থ হতে আড়াই মাস সময় লাগলো। এই আড়াই মাস তারা কঠিন কষ্ট পাইলো আর রাত-দিন এক
করে আম্মা করলেন অকল্পনীয় কষ্ট । যেখানে প্রায়ই রাতেই আম্মা ঘুমাতেন ১-২ ঘন্টা।
মাঝ রাতে উঠে কাউকে না কাউকে মাথায় পানি ঢালছেন আর দিনের বেলাতো ছিলই, সাথে তাদের জন্য টাটকা স্যুপ রান্নাসহ রোগির পথ্যের জন্য রান্না, অন্যদের জন্য তো আলাদা কিছু করতই ।
এর সাথে বাকি কাজ। হঠাৎ করে আব্বার পায়ের অপারেশন করতে হলো জরুরি কারণে। আবার
আব্বার আলাদা খেয়াল। আমি ব্যবসায় যেতাম,
মাঝে পড়তে যেতাম আর ডাক্তার, ঔষধ, বাজার এর ফাঁকে আম্মাকে কিছুটা সাহায্য করার চেষ্টা।
আর আরো যখন ছোট- ৩ ভাই-বোনকে সকাল সকাল উঠে রেডি করে স্কুলে পাঠানো, ফিরে আসার আগে খাবার রেডি রাখা,
আব্বার প্রতি দায়িত্ব, ঘরের অন্যান্য কাজ। আর যদি কাজের বুয়া না থাকতো তাহলে তো সব কাজ আম্মাকে একাই
করতে হতো। কি পরিমাণ কষ্ট করতে হতো আম্মাকে,
কিভাবে সবারটা ঠিক রাখতো।
বাকি এই দীর্ঘ সময়ে আমিও ভালোই অসুস্থ হলাম ,জন্ডিস,ম্যালেরিয়া জ্বর আর ছোট বেলার কথাতো নাই বললাম।
আজ আম্মা অসুস্থ। এই বয়সে আম্মার জীবনে খুব কঠিন একটা রোগের বড় একটা অপারেশনের
মাঝে গেল। ১ মাস ইন্ডিয়া থেকে চিকিৎসা করে ফিরলাম প্রায় ২০ দিন। অপারেশনের পর
ইন্ডিয়াতে নিজে রান্না করে আম্মাকে খাওয়াতাম। জানতাম ভালো হতো না , তার পরেওচেষ্টা, প্রতিটা movement
আমি ধরে করাতাম। আম্মার
অবস্থা ছিলোনা নিজে নিজে move করার। দেশে আসার পরও আমি করছি, ছোট বোনটা তার ফাইনাল পরীক্ষার মাঝেও কাজ করে দিত। কাজের বুয়ার রান্না খাইনা, তাই নিজেই করি । কখনো ভালো হয়,
কখনো হয়না ঘরের বাকিরা মানিয়ে
নেয়।
ভাগ্য ভালো ২ জন থেকে ১ জন বুয়া অন্য কাজের জন্য আসে। সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার
আগে মার ঔষধ, খাবার একে একে বাকিদের দিয়ে তারপর নিজে। এর পর
আম্মার আলাদা, বাকিদের জন্য আলাদা রান্না। হঠাৎ করেই মাঝে কয়েকদিন
কাজ শেষে খুব ক্লান্ত হয়ে পরতাম। পরেরদিন ভাবতাম বুয়াতো ধোয়া-পালা, ঝাড়ু-পরিষ্কারের কাজ করে দেয়,
তবুও আমি খুব ক্লান্ত হয়ে
যায়। আর আম্মা কিভাবে পারতেন এতকিছু সামলাতে?
কখনো বা দেখেছি ক্ষণিকের জন্য
বলতে- খুব হয়রান লাগছে। কিন্তু কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। আর আজ আমি তার তুলনাই কিছুইতো
করছিনা তারপরেও দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায়। ব্যবসায় যাওয়ার সুযোগ নেয় না।
যদিও আম্মা
এখন নিজে নিজে movement করতে পারে। কিন্তু বাকি কাজে হাত দেয়ার মতো অবস্থা
হয়তো আগের মতো হবেনা। দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা চলবে।তবে রান্নার ঘর নিষিদ্ধ। কাজের
মাঝে, পরে ভাবি কিভাবে আম্মা এতকিছু ম্যানেজ করতেন?
চলমান জীবনের সব দুঃখ- কষ্ট-গ্লানি একপাশে রেখে কিভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন? আমারতো রাগ একটু বেশি। কেন পারিনা এ সব একপাশে রেখে আম্মার মত করতে। জানি
অসম্ভব, কিছুটা করার মতো ক্ষমতাও আমার নেই। ডাক্তার বললেন
আম্মা্র মন যেন সব সময় ভালো থাকে খেয়াল রাখতে হবে। কিন্তু পারিনা। আম্মার মত করে
কিছুই করতে পারিনা। ভাবি পরের মেয়ে আনবো! কিন্তু কতটুকুই বা করতে চাইবে? হিতে না বিপরীত হয়ে যায়।
খুব হতাশ লাগে।
সবসময় চাই যেন আম্মা সুস্থ হয়ে উঠুক,
আমিই সব করে যেতে চাই বাকি
সময়।
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.