সোনালী ব্যাংক বিড়ম্বনা :
অনেকদিন যাবত আব্বু আম্মু আমার পিছনে লাগছে একটা ডিপিএস (DPS) করার জন্য। কিন্তু আমি রাজি না। এরপর আবার শুরু করছে সঞ্চয়পত্র কিনার জন্য। অবশেষে রাজি হলাম কারণ ব্যাংক এ কিছু অলস টাকা জমা আছে। আব্বু সোনালী ব্যাংক থেকে ফর্ম নিয়ে আসলো এবং আমাকে জোড় করে ফর্ম পূরণ করতে বাধ্য করল।
আব্বু বলল সব কাজ আব্বু করে দিবে, আমাকে শুধুমাত্র আব্বুর সাথে একদিন ব্যাংক এ যেতে হবে। মাত্র আধা ঘণ্টা লাগবে। আমি রাজি হলাম। অফিস থেকে একদিন ছুটি নিলাম কারণ সোনালী ব্যাংক বলে কথা।
ব্যাংক খুলবে সকাল ১০ টায় কিন্তু আব্বু সকাল ৯ টা থেকেই রেডি হয়ে বসে আছে আমার সাথে ব্যাংক এ যাবে বলে, আর আমি তখনও ঘুম। আমার বাসা থেকে ব্যাংক এ যেতে সময় লাগে মাত্র ১৫-২০ মিনিট। আব্বু খুব বিরক্ত হয়ে ৯.২০ এর দিকে আমাকে ঘুম থেকে জাগালো। সব কাজ শেষ করে বাসা থেকে বের হলাম সকাল ১০ টায়। ব্যাংক এ পৌঁছাইলাম ১০.১৫ তে। লোক সমাগম অনেক কম। আব্বু বলল কাজ শেষ করতে আধা ঘণ্টাও লাগবে না।
প্রথমেই গেলাম হেল্প ডেস্ক এ। সঞ্চয়পত্র কিনব বল্লাম, উনি বল্ল সোজা দুইতালায় গিয়ে ফর্ম নিয়ে আসতে, গেলাম ২ তালায়, Madam (Assistant Director) থেকে ফর্ম নিলাম, এরপর বলল ফর্ম ফিলআপ করে Counter গিয়ে টাকা জমা দিতে। ফর্ম ফিলআপ করে লাইন এ দাঁড়ালাম। Counter এ চেক (Self Cheque) জমা দিলাম। উনি জানালেন আমার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে, আমি টাকা উঠাতে পারব না। আমাকে আবার পুনরায় অ্যাকাউন্ট রিওপেন করতে হবে। আমি বল্লাম এখন আমাকে কি করতে হবে? উনি বললেন অ্যাপ্লিকেশান করতে হবে। বিড়ম্বনা পর্ব শুরু হল।
আবার গেলাম হেল্প ডেস্ক এ। উনি উনার পাশের টেবিল এর Madam এর কাছে যেতে বললেন। Madam এর কাছে গেলাম, সমস্যার কথা বল্লাম, উনি মনোযোগ দিয়ে শুনল এবং একটা বৃদ্ধ Uncle এর টেবিল এ যেতে বলল। গেলাম Uncle এর ডেস্ক এ, Uncle একটা অ্যাপ্লিকেশান ফর্ম দিয়ে বলল এটা ফটোকপি করে আনতে। গেলাম ফটোকপি করতে, আরেক বিড়ম্বনা, দেখি কারেন্ট নাই, একটা দোকানে দেখলাম Generator দিয়ে ফটোকপি করানো হচ্ছে কিন্তু ৪ গুন বেশি টাকা দিতে হবে। ফটোকপি করালাম।
এরপর ফর্ম ফিলআপ করে Uncle কে দিলাম। উনি ফর্ম নিয়ে আবার হেল্প ডেস্ক এ গিয়ে একটা কেওয়াইসি (May be KYC) ফর্ম নিতে বলল। ওবাজি ৮ পেজ এর ফর্ম। এবার বলল এটা ফিলআপ করতে। অনেক ধৈর্য ধরে ফর্ম ফিলআপ করলাম। এইবার Uncle আমাকে সব কাগজপত্র নিয়ে ম্যানেজার (Manager) এর কাছে পাঠাল ফর্ম ভেরিফাই করে আনতে। ম্যানেজার সব দেখে আমাকে আরেক জনের কাছে পাঠাল সিগনেচার (Signature) ভেরিফাই করে আনতে। মনে মনে ভাবতেছি এর শেষ কথায়? উনি সিগনেচার (Signature) ভেরিফাই করল এবং তারপর আমাকে ২ নম্বর Counter এ যেতে বলল। আমি বল্লাম কেন? উনি বলল সফটওয়্যার এ সিগনেচার (Signature) ভেরিফাই করতে হবে তাই ২ নম্বর Counter এ যেতে হবে। গেলাম ২ নম্বর Counter এ, গিয়ে দেখি উনি সিট এ নাই। ১০-২০ মিনিট অপেক্ষা করলাম কিন্তু উনার কোন দেখা নাই। পাশের ডেস্ক এর কেউ কিছু বলতে পারে না উনি কোথায় আছে? আব্বু উনার নাম জেনে উনাকে খুঁজতে বের হল আর আমাকে লাইন এ দাঁড়িয়ে থাকতে বলল। অবশেষে উনাকে আব্বু খুঁজে পেলেন এজিএম (AGM) এর রুম এ। উনি সিগনেচার(Signature) ভেরিফাই করে দিল। সব ভেরিফাই শেষ করে এবার Uncle এর কাছে আসলাম।
তখন ঘড়িতে ১২ টারও বেশি বাজে। বৃদ্ধ Uncle কে বল্লাম সব কাজ শেষ আর কিছু কি করতে হবে? বৃদ্ধ Uncle মুছকি হাসি দিয়ে বলল এখনও অনেক কাজ বাকি, আমি বল্লাম কি? উনি বলল এখন আমি সফটওয়্যার এ এই ৮ পেজ এর কেওয়াইসি (KYC) ফর্ম টা পোস্টিং দিব। এটা শুনার পর আমার এবং আব্বুর চোখ কপালে উঠলো। উনি কম্পিউটার অন করল এবং অনেক কষ্ট করে সফটওয়্যার টা ওপেন করল। শুরু করলেন পোস্টিং দেয়া। বৃদ্ধ Uncle টাইপিং স্পীড ছিল অসাধারণ (1 Word/ 1 Min)। টাইপ শেষে উনি ভুলে সেভ বাটন ক্লিক না করে অন্য একটা বাটন ক্লিক করল। এরর মেসেজ আসলো। আবার বিড়ম্বনা ......। আবার পুররায় টাইপ করে সেভ করল। আমি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। এরপর বৃদ্ধ Uncle আমাকে পাশের টেবিল এ যেতে বলল। গেলাম তারপর উনি আমার অ্যাকাউন্ট টা রিওপেন করে দিল।
এরপর আবার লাইন এ দাঁড়ালাম চেক জমা দেবার জন্য। অনেক বড় লাইন। অবশেষে চেক জমা দিলাম। উনি সবকিছু দেখে বলল সব ঠিক আছে কিন্তু সঞ্চয়পত্র এর টাকা তো এইখানে জমা নেয়া হয় না, আপনাকে ১৭ নম্বর Counter এ যেতে হবে। ১৭ নম্বর Counter গিয়ে দেখি উনিও সিট এ নাই। কেউ আমারে মাইরাহালা ......। ৫-৬ মিনিট পর উনি আসলেন, সবকিছু ওকে করে আমাকে ২ তালায় Madam (Assistant Director) এর কাছে যেতে বললেন। গেলাম Madam (Assistant Director) এর কাছে। উনি আমাকে একটু ওয়েট করতে বললেন। আমিও বসে আছি। একটু পর আব্বু আসলো এবং দেখল আমি এখনও বসে আছি। আব্বু বলল কিরে এখনও সিগনেচার করে নাই, আমি বল্লাম না। আব্বু বলল কিছু টাকা দে, তা না হলে সাইন করবে না। আমি টাকা দিতে রাজি হলাম না। অবশেষে আব্বু নিজের পকেট থেকে একটা নোট উনার হাতে দিয়ে বলল এটা আমার ছেলে একটু সাইন করে দেন। উনি একটুও দেরি না করে একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিজ হাতে মাত্র ১০ মিনিটে আমার সব কিছু করে দিল।
অবশেষে আমি মুক্তি পেলাম সোনালী ব্যাংক থেকে ......।
অভিজ্ঞতা:
লাইফ এর অন্যতম একটা বাজে এবং বিরক্তিকর দিন। আমার
নিজেকে একটা ফুটবল মনে হইছে। আমি একটা ফুটবল, সোনালী ব্যাংক একটা মাঠ এবং উনারা
সবাই খেলোয়াড়। উনারা সবাই সোনালী ব্যাংক নামক একটা মাঠে আমাকে নিয়ে ইচ্ছামত ফুটবল
খেলতিছে।
পরামর্শ:
সোনালী ব্যাংক এ যাবার পূর্বে অবশ্যই অফিস থেকে ছুটি
নিবেন। কাগজ, কলম, খাবার, ফোল্ডিং চেয়ার অবশ্যই সাথে রাখবেন। ধৈর্য এবং সীমাহীন সময় থাকা বাধ্যতামূলক।
সতর্কতা:
আমার মত কেউ টাকা দিতে লজ্জাবোধ করবেন না। তাহলে কিন্তু
মহাবিপদে পরবেন। টাকা না চাইতেই টাকা দিতে বাধ্য থাকিবেন।