Saturday, June 6, 2015

ব্যর্থ মানুষের চিন্তা ভাবনা

আপনি যখন ইতিবাচক চিন্তা করবেন তখন আপনার মন প্রফুল্ল থাকবে। নেতিবাচক চিন্তা আপনার মনকে দুশ্চিন্তগ্রস্ত করে তুলে একই ভাবে আপনাকে করবে অবসাদগ্রস্ত। মনে করুন আপনি একটি কাজে সফল হতে পারেননি। সেক্ষেত্রে আপনি কী নিজেকে ব্যর্থ মানুষ মনে করেন? আসলেই কি আপনি একজন ব্যর্থ মানুষ? ব্যর্থ মানুষ হিসেবে আপনি নিজেকে কীভাবে চিহ্নিত করবেন যার কিছুগুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে তুলে ধরা হয়েছে।

না ভেবেই কাজ : ভেবে চিন্তে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ। যেকোনো কাজ করার আগে আপনাকে কিছু চিন্তাভাবনা করতে হবে। সেই চিন্তার মাত্রা যদি আপনার আয়েত্বের বাইরে থাকে তাহলে অন্যের সঙ্গে পরামর্শ করে এগোন ভাল। অর্থাৎ না ভেবেই  কোনো কাজ করা ঠিক না।


সবজান্তা মনোভাব : প্রত্যেক মানুষের মধ্যে কিছু না কিছু দুর্বলতা রয়েছে। সেই দুর্বলতা মেনেই তাকে চলতে হবে। সবজান্তা মনোভাব এ ধরনের চিন্তা থাকার ফলে আপনি জানবেন হয় আপনি পাবেন নতুবা পাবে না। এর ফলে আপনার আত্মবিশ্বাস বেশি থাকবে। এটা মনে রাখবেন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস আপনার পতন ঘটাতে পারে। জীবনের চলার পথে কোন কিছুই পারফেক্ট থাকেনা। পাওয়া না পাওয়ার মাঝামাঝিও অনেক কিছু থাকে সে ব্যাপাওে প্রস্তুত থাকুন।

অন্যেও ক্ষতি করার চেষ্টা : প্রত্যেক ধর্মে ভাল কাজ করার কথা বলা হয়েছে। সেখানে আরো উল্লেখ রয়েছে যে অন্যের ক্ষতি করলে নিজের ক্ষতি হয়। অর্থাৎ আপনি যদি কারো ভাল কিছু করতে না পারেন তাহলে ক্ষতি করবেন না। অন্যের ক্ষতি হচ্ছে তা যদি আপনি জানতে পারেন তাহলে তাকে সাবধান করে দেয়া আপনার নৈতিক দায়িত্ব।

পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়া : আপনি মেধাবী কিংবা কম বেধাবী স্টুডেন্ট তাতে কোনো সমস্যা নেই। আপনাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে এটাই বড় কথা। কিন্তু ব্যর্থ মানুষের চিন্তা ভাবনা সে পড়াশোনা করে কিছুই করতে পারবে না।

নেতিবাচক চিন্তার কথা ও কাজকর্ম : ইতিবাচক চিন্তার প্রতি অবহেলা করে নেতিবাচক চিন্তা ও কাজকর্ম করা ব্যর্থ মানুষের লক্ষ্যণ। এই ধরণের চিন্তার ক্ষেত্রে আপনি যেকোনো ইতিবাচক বিষয়কেই নিজের অজান্তে নেতিবাচক ভাবে ভাবতে থাকবেন। এভাবে চিন্তার ফলে আপনি আপনার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে পারেন। ইতিবাচক চিন্তা কে পাশ কাটিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করার ফলে আপনার কর্মক্ষেত্রে এর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। যে কাজ আপনি সাফল্য পেতেন সে কাজে সাফল্য নাও আসতে পারে।

প্রতিদিন বিভ্রান্ত হওয়া : আপনি যে কাজেই করেন না কেন প্রত্যেক কাজে সফলতা আসবে তা আশা করা ঠিক নয়। আপনি কাজ করছেন কিন্তু সফলতা পাচ্ছেন না এতে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। প্রয়োজন বোধে সেই কাজের জন্য বিকল্প পদ্ধতি খুজে বের করেন। প্রতিদিন কাজে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। এই বিভ্রান্ততাই আপনার সফলতার প্রধান বাধা।

অন্যেও ওপর সব সময় রেগে থাকা : ব্যর্থ মানুষরা নিজের ভুল স্বীকার করতে চায় না। তারা নিজের ভুলটাও অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। সেক্ষত্রে ব্যর্থ মানুষটা অন্যেও ওপর সব সময় রেগে থাকেন।

সবকিছুকে নিজের অধিকার মনে করা : এমন ভাবনা থাকা নেতিবাচক যেখানে আপনি আপনার দোষ বা গুণ থাকুক বা নাই থাকুক আপনি নিজেকে এমন ভাবতে শুরু করেন। এ ধরনের সমস্যঅ কে সংক্ষেপে ‘‘ঞযব সড়ঃযবৎ ড়ভ মঁরষঃ’’ বলা হয়ে থাকে। সব কিছুকে ব্যক্তিগত ভাবে নেয়াকে সব সময় সবাই ভালো চোখে দেখেনা। অনেকে এতে আপনাকে ভুলও বুঝতে পারে। কেউ একজন কোনো কথা বলল আপনি না জেনেই ধওে নিলেন আপনাকেই বলা হয়েছে সেটা। এই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে আপনার সাথে আপনার আশে পাশের মানুষের সম্পর্ক নষ্ট হবার সম্ভাবনা বেশি।

সংক্ষিপ্ত পথে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা : আপনি নিজে পরিশ্রম করতে চান না। কিন্তু সহজেই সর্বোচ্চ শিকরে পৌঁছাতে চান। এই ধরনের মনোভাব থেকে আপনার মাঝে অসৎ পথের চিন্তাভাবনা আসতে পারে যা ভবিষ্যতের জন্য খারাপ।

লক্ষ্য ছাড়া কাজ করা : প্রত্যেক কাজের জন্য লক্ষ্য বির্ধারণ করাই ভালো। লক্ষ্য ছাড়া কোনো আপনি বেশি দূর এগোতে পারবে না। আপনি যখন মনে মনে কোনো কাজ করতে হবে অথবা অবশ্যই করতে হবে এমন ভাবনা পোষণ করেন তখন কিছুটা হলেও সেই কাজের দিকে লক্ষ্য স্থিও হয়। আপনি লক্ষ্য করলেন কিন্তু মনে অজান্তেই ভাবতে শুরু করেবেন কীভাবে অন্য মানুষরা কাজটি করেছে? এতে কওে আপনি হতাশায় মগ্ন হবেন।

সমালোচনা করা : অন্যের সমালোচনা করা ভালো নয়। এটা জানার পরেও কিছু মানুষ সমালোচনা করছেই। তাদের কাছে সমালোচনা করতেই যেন ভালো লাগে। ইসলাম ধর্মে উল্লেখ রয়েছে যে অন্যের সমালোচনা করা আর মরা ভাইয়ের মাংস খাওয়ার সমান।

সহজেই হতাশ : আপনাকে হতাশ জনক অবস্থাকে ঢেকে রাখার বা এড়িয়ে যাবার ব্যবস্থা। মানসিক হতাশা থেকে একজন মানুষ নেতিবাচক ঘটনাকে অন্য ইতিবাচক ঘটনার দিয়ে বিচার কওে মানসিকভাবে রিলাক্স হতে চায়। মানুষ তাদের ভুল বা হতাশার বিষয়টি এড়িয়ে সাফল্য দিয়ে ঢাকতে চায় এতে ওই হতাশা না কেটে বরং তা পরবর্তীতে আরও প্রকট ভাবে দেখা দেয়।

পরিবর্তনে ভয় : ব্যর্থ মানুষের সবচেয়ে বড় দোষ পরিবর্তনে ভয়। তারা নিজেদেরকেও পরিবর্তন করেন না, অন্যদেরকে পরিবর্তন হতে দেন না। এরা অন্যের পরিবর্তনের দোষ খুজে বেড়ায়।

বেশি তথ্য-উপাত্ত জড়ো করা : ব্যর্থ মানুষরা অন্যের ভালো তথ্য-উপাত্তা কমই খোজে। নিজের ভুল তথ্য না খুজে অন্যের ভুল তথ্য সংগ্রহ করে নিজের মাথায় রাখে। অন্যের ক্ষতি করার সময় সেই তথ্যগুলো প্রকাশ করে। নিজেকে উপরোক্ত কর্মকর্তার কাছে ভাল সাজার চেষ্টা করে।

শোনার চেয়ে বেশি কথা বলা : যখন কোনো খারাপ কিছু ঘটে আপনি অনুমান করেন যে সেটি আবার ঘটবে! যেমন আপনি কারো কাছ থেকে সময় চেয়েছেন, কিন্তু তিনি আপনাকে সময় দেয়নি এতে আপনি মানসিকভাবে ধরেই নিলেন যে আপনাকে এর পরের ব্যক্তিটিও সময় দিবেনা। এ ধরনের চিন্তা ভাবনার ফলে আপনি আত্মবিশ্বাস সম্পূর্ণ রুপে হারিয়ে ফেলবেন যা আপনাকে হতাশায় নিমজ্জিত করে দেবে।

অন্যের ব্যর্থতা আশা করা : নিজে তো ভালো কাজ করার চেষ্টাই করেন না। অন্যের ব্যর্থতা আশা করে নিজেকে বড় করে দেখা।

শত্রুতাপূর্ণ কাজ করা : এটা এমন একটি বিষয় যেখানে আপনি এমন একটি পর্যায়ে চিন্তা ভাবনা করবেন যা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় অর্থাৎ ঘটনা থেকে প্রতিক্রিয়া বেশী দেখাবেন। সাধারণ সমস্যাকে বিরাট করে নিজে দেখবেন অন্যকে দেখাবেন। একে ডাক্তারি ভাষায় সিজফ্রেনিয়া সিন্ড্রোম বলা হয়ে থাকে। একজন সিজফ্রেনিয়া রোগী মানসিক ভাবে ভিন্ন জগতে বসবাস কওে বাস্তবের সাথে যার কোনো মিল নেই।

অন্যকে দায়ী করা : যুক্তিহীন আবেগ দেখে অন্যকে দায়ী করা। আসলেই বাস্তব জীবনে যুক্তিহীন আবেগের স্থান নেই। আপনি নিজে অপরাধ করেছেন কিন্তু তা অন্যের ওপর চাপিয়ের দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন।

সময়ের অপচয় করা : সময় অতি বড় মূল্যবান। জীবন থেকে যে সময় চলে যান তা আর ফিরে আসে না। তাই সময়ের কাজ সময়েই করা ভালো। কিন্তু ব্যর্থ মানুষরা সময়ের মূল দিতে জানেন না। তারা ফেসবুক কিংবা অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্টা করেন।


নিজেকে অপরাধী ভাবা : আপনি কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগ অথবা শেয়ার ক্রয় করলেন পওে দেখা গেল আপনি বিরাট লসে পওে গেলেন। এই ক্ষেত্রে আপনি নিজেকে পরাজিত, ব্যর্থ অথবা দুর্ভাগা ভাবা শুরু করেন। নিজের বিষয়ে এ ধরনের নেতিবাচক ভাবনা আপনাকে আরও হতাশ করে তুলতে পারে। আপনি আপনাকে যে ভাবেই চিন্তা করুন না কেন এতে মানুষের কিছু আসে যায় না, এত আপনারই ক্ষতি। আপনি সব সময় চেষ্টা করবেন আপনাকে দিয়ে যা হবার তাই ঠিক সময়ে হবে। অতএব অপেক্ষা করুন লেগে থাকুন।



Source: SylhetBartha24.com


Contact Form

Name

Email *

Message *