আমরা যারা নামাজ পড়ি, সকলেই জানি নামাজের দ্বিতীয় ও চতুর্থ রাক’য়াতের শেষে-
তাশাহহুদ পড়া ওয়াজিব। কিন্তু জানা আছেকি তাশাহহুদ এর ইতিহাস?
কি পড়ি আমরা তাশাহহুদ এর মধ্যে ? আসুননা, আমরা আজকে জানার চেষ্টা করি
তাশাহহুদ এর অর্থ আর ইতিহাস।
শুরুর কথা.............
হযরত খাদিজা (রাঃ) ইন্তেকাল করেছেন।
মক্কার মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় লাভ করলেও,,,
অধিকাংশই মুশরিক রয়ে গেছে। তাই রাসুল (সাঃ) এর মনে অনেক ব্যাথা।
দিনে দিনে রাসুলের (সাঃ) প্রতি কোরাইশদের অত্যাচারের মাত্রাও বেড়ে গেছে।
এমন অবস্থায় আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন রজব মাসের এক মহিমাম্বিত রজনীতে
এশার নামাজের পর তার প্রিয় বন্ধুকে হযরত জিব্রাইল (আঃ) এর মাধ্যমে তার সান্ধিধ্যে ডেকে নিলেন, যা ইতিহাসে মে’রাজ নামে পরিচিত।
রাসুল (সাঃ) বায়তুল্লাহ হয়ে বায়তুল মোকাদ্দাস, অতপর উর্দ্ধজগতের সফর শুরুকরলেন।
বোরাক নামক বেহেশতি বাহনে চড়ে প্রথম আসমান, দ্বিতীয় আসমান, তৃতীয় আসমান করে অতপর সিদরাতুল মুনতাহায় পৌছলেন। এ পর্যন্ত হযরত জিব্রাইল (আঃ) রাসুল (সাঃ) এর সাথী হলেন।
সিদরাতুল মুনতাহাতে গিয়ে হযরত জিব্রাইল (আঃ) রাসুল (সাঃ) এর কাছ থেকে বিদায় নিলেন।
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন তার বন্ধুরজন্য বোরাকের থেকেও গতি সম্পন্ন বাহন ‘রফরফ’ পাঠিয়ে দিলেন। এ বাহনে চড়ে রাসুল(সাঃ) আল্লাহর নূরের সত্তর হাজার পর্দা অতিক্রম করে মহান প্রভুর দরবারেগিয়ে পৌছলেন। দুজন দুজনার খুব নিকটবর্তী হলেন।
আল্লাহ হলেন মেজবান আর আমার নবী (সাঃ) হলেন মেহমান। সুন্নত তরীকা হলো মেহমানকারো বাড়িতে গেলে মেজবানের জন্য কিছু তোহফা/উপহার নিয়ে যাওয়া। স্বয়ং আল্লাহতায়ালার সাথে সাক্ষাতে গেছেন তার প্রিয় রাসুল (সাঃ), তিনি কি নিয়ে যেতে পারেন?
আল্লাহতো দুনিয়াবী কোন কিছুর মুখাপেক্ষী নন। তাহলে?
আল্লাহর হাবীব জনাবে মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন আল্লাহর খুবই নিকটবর্তী হলেন,
এমনকি তাদের মাঝে একটি রশি বা একটি ধনুকের সমান জায়গার ব্যাবধান ছিলো তখন-
শ্রেষ্ঠ তোহফা হিসেবে পড়লেন.
"আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াসসালাওয়াতু ওয়াত্তয়্যিবাত"
“সকল মর্যাদাব্যঞ্জক ও সম্মানজনক সম্বোধন আল্লাহর জন্য। সমস্ত শান্তি, কল্যাণ ও প্রাচুর্যের মালিক একমাত্র আল্লাহ। সব প্রকার পবিত্রতার মালিকও তিনি।”
এক কথায় রাসুল (সাঃ) আর্থিক, শারিরীক ও মৌখিক সব ধরনের ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্য তোহফা হিসেবে পেশ করলেন।
অতপর আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.) কে তিনটি জিনিষ দিলেন এভাবে-
"আসসালামু আ’লাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়ারাহমাতুল্লহিওয়াবারাকাতুহু"
হে নবী! আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকত বর্ষিত হোক।
উম্মতের কান্ডারী নবী (সাঃ) এমন মিলন মুহুর্তেও তার উম্মতকে ভুলেন নাই।
আল্লাহর অনুগ্রহ তার উম্মতের জন্যও চেয়ে নিলেন এভাবে-
"আসসালামু আ’লাইনা ওআ’লা- ই’বাদিল্লাহিস সলিহীন"
আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দাহদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।
আল্লাহ এবং তার রাসুল (সাঃ) এর এমন মধুরআলোচনা শুনে আরশবাহী-
সকল ফেরেশাতাগণ সমস্বরে একত্রে বলে উঠলেন-
"আশহাদু আন লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াশহাদু আন্না মোহাম্মাদান আ’বদুহু ওয়ারাসুলুহু"
আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি মোহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দাহ এবং রাসুল।
আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামিন, রাসুল (সাঃ) এবং ফেরেশতাদের এমন সম্মিলিত
কথোপকথনই হয়ে গেলো তাশাহহুদ, যা মে’রাজের রজনীতে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোহফা হিসেবে পাওয়া পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ সহ প্রত্যেক নামাজের দুই রাকাত বা চার রাকা’তের বৈঠকে পড়া ওয়াজিব।
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.